
বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র কথা বলা নয়, মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা, অনলাইন ক্লাস, মোবাইল ব্যাংকিং সহ নানাবিধ কাজ সম্পন্ন করা যায়। তাই এসব সেবার ব্যয় সম্পর্কেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। Airtel বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটর, যার গ্রাহক সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। Airtel ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতিদিনের ব্যবহার অনুযায়ী ব্যালেন্স জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনেকেই জানতে চান, এয়ারটেল ব্যালেন্স চেক করার সবচেয়ে সহজ উপায় কী?
ব্যালেন্স চেক করা কেন দরকার?
ব্যালেন্স চেক করা কোনো বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজন। অনেক সময় দরকারি ফোন কল করার মুহূর্তে দেখা যায় ব্যালেন্স শেষ। আবার ইন্টারনেট চালাতে গিয়ে হঠাৎ করে ডাটা শেষ হয়ে গেলে অসুবিধা হয়। এ অবস্থায় অপ্রস্তুত না হতে চাইলে প্রতিদিনের ব্যবহারের পর ব্যালেন্স জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া অনেকেই ডাটা প্যাক, মিনিট প্যাক বা এসএমএস প্যাক কিনে ব্যবহার করেন। এসব প্যাকের মেয়াদ বা অবশিষ্ট পরিমাণ জানতেও ব্যালেন্স চেক করা প্রয়োজন। Airtel এসব তথ্য ইউএসএসডি কোড বা অ্যাপের মাধ্যমে সহজে জানার সুযোগ দিয়েছে।
ইউএসএসডি কোড দিয়ে ব্যালেন্স জানার পদ্ধতি
সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে ইউএসএসডি কোড ব্যবহার। এই পদ্ধতিতে মোবাইল ফোন থেকে নির্দিষ্ট কোড ডায়াল করে আপনি ব্যালেন্স জানতে পারবেন।
Airtel ব্যালেন্স চেক করার জন্য সাধারণত এই কোডটি ব্যবহার করতে হয়:
- *778# – এটি মূল ব্যালেন্স দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়
কোডটি ডায়াল করার পর আপনার মোবাইল স্ক্রিনে অবশিষ্ট টাকা দেখাবে। এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না, যে কোনো বাটন ফোন বা স্মার্টফোন থেকেই ব্যবহার করা যায়।
অন্যান্য ইউএসএসডি কোড
Airtel ব্যালেন্স ছাড়াও আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে জানা যায়, যেমন:
- 12310# – মিনিট ব্যালেন্স চেক করতে
- 12311# – ইন্টারনেট ব্যালেন্স জানতে
- 7786# – এসএমএস ব্যালেন্স জানতে
এই কোডগুলো সংরক্ষণ করে রাখলে আপনি দ্রুত যেকোনো তথ্য জেনে নিতে পারবেন।
My Airtel অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যালেন্স চেক
যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো “My Airtel” অ্যাপ। এটি Google Play Store ও Apple App Store-এ পাওয়া যায়। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি শুধু ব্যালেন্সই নয়, বরং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন, যেমন:
– অবশিষ্ট ডাটা
– মিনিট ও এসএমএস ব্যালেন্স
– অ্যাকাউন্ট রিচার্জ অপশন
– বিভিন্ন অফার ও প্যাক
অ্যাপটি ইনস্টল করার পর আপনার Airtel নম্বর দিয়ে লগইন করতে হবে। এরপর অ্যাপের হোম স্ক্রিনেই আপনার বর্তমান ব্যালেন্স, ডাটা, মিনিট সবকিছু এক নজরে দেখা যাবে। যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী।
বিকল্প উপায়: কাস্টমার কেয়ার ও এসএমএস
অনেক সময় ইউএসএসডি কোড কাজ না করলে বা ফোনে সমস্যা থাকলে বিকল্প পদ্ধতিও রয়েছে। আপনি Airtel কাস্টমার কেয়ারে কল করে ব্যালেন্স জানতে পারেন। ১২১ নম্বরে কল করলেই আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যালেন্স শুনতে পারবেন বা কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে পারবেন।
তবে বর্তমানে এসএমএসের মাধ্যমে ব্যালেন্স জানার সুবিধা সীমিত, কারণ ইউএসএসডি এবং অ্যাপ ব্যবহার এত সহজ যে এসএমএস পদ্ধতি এখন খুব কম ব্যবহৃত হয়।
বিদেশে থাকা অবস্থায় ব্যালেন্স চেক
যদি আপনি বিদেশে অবস্থান করেন এবং রোমিং চালু থাকে, তাহলেও এয়ারটেল ব্যালেন্স চেক করা সম্ভব। ইউএসএসডি কোড কাজ না করলে My Airtel অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া, Airtel ওয়েবসাইটে ঢুকেও আপনার নম্বর দিয়ে লগইন করে ব্যালেন্স দেখা যায়।
ব্যালেন্স চেক করতে না পারলে কী করবেন?
অনেক সময় দেখা যায় ইউএসএসডি কোড কাজ করছে না, কিংবা অ্যাপ লগইন হচ্ছে না। এই অবস্থায় নিচের বিষয়গুলো দেখে নিতে পারেন:
– ফোনে নেটওয়ার্ক ঠিক আছে কিনা
– ইউএসএসডি কোড সঠিকভাবে টাইপ করা হয়েছে কিনা
– অ্যাপ আপডেট করা আছে কিনা
– অ্যাকাউন্টে বৈধতা (validity) আছে কিনা
এসব দেখে নিয়েও যদি সমস্যা থাকে, তাহলে সরাসরি ১২১ নম্বরে কল করে সাহায্য চাওয়া যায়।
নিয়মিত ব্যালেন্স চেকের অভ্যাস গড়ুন
স্মার্ট ব্যবহারকারী হতে চাইলে প্রতিদিন ব্যালেন্স চেক করা অভ্যাসে পরিণত করুন। এতে আপনি হঠাৎ করে ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে পারবেন। একইসঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন কোন প্যাকেজে আপনার খরচ কম, কোনটায় বেশি।
বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যদি নিয়মিত ব্যালেন্স ও ডাটা ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করেন, তবে তারা অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
উপসংহার
Airtel গ্রাহকদের জন্য ব্যালেন্স চেক করা অত্যন্ত সহজ কাজ। আপনি চাইলে ইউএসএসডি কোড, My Airtel অ্যাপ বা কাস্টমার কেয়ারের মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারেন। প্রতিনিয়ত ব্যালেন্স যাচাই করা শুধু অর্থ সাশ্রয়ের জন্য নয়, বরং জরুরি অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত রাখার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। তাই আজ থেকেই আপনি এয়ারটেল ব্যালেন্স চেক করার নিয়মটি ভালোভাবে মনে রাখুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করুন। এই তথ্যগুলো মনে রাখলে, Airtel ব্যবহারে আপনি আরও সচেতন এবং দক্ষ হয়ে উঠবেন।